আপু তোমার জামাটা সুন্দর
কথাটা শুনে পিছনে ফিরে তাকালাম, দেখি ২/৩টা বাচ্চা মেয়ে জীর্ণ জামাকাপড় পরনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আর আমার বান্ধবী তন্বী শপিং করতে গেছিলাম। ফুটপাত দিয়ে আসার পথে এটা শুনে থমকে গেলাম। দুই বান্ধবী এগিয়ে গেলাম ওদের কাছে। জানতে চাইলাম জামা সুন্দর বলতে কি বলছো? কোন জামা সুন্দর? মাঝখান থেকে ৮/৯বছরের মেয়েটি বলে উঠলো আপা আপনার গায়ের জামাটা সুন্দর তাই বলছি। মাফ করে দেন আপা আর বলবনা। তখন আমরা কি বলবো বুঝতে পারিনি। অবাক হয়ে চুপ করে ছিলাম দুজন। নিরবতা ভেঙ্গে তন্বী বললো, _তোমাদের বাসা কোথায়? _মেয়েটি বলে, বাসা নাই আপা ফুটপাতে কাগজ কুড়াই আর ওইদিকে একটা পলিথিনের বেঁড়ার ঘরে আমরা থাকি। আমরা বুঝে গেছি সব আর বলতে হয়নি। _তোমরা কাপড় পেয়েছো ঈদের? _আপা, এক বেলা খেতে পারলেই খুশি আর কাপড় লাগবে না। ওদের সাথে কথা বলে বুঝলাম, ওদের একটা চাহিদা আছে, ইচ্ছা আছে যে কেউ ওদের কিছু দিক। তাইতো এরকম দাঁড়িয়ে অন্যদের কেনাকাটা আর যাওয়া আসা দেখে। আমরা বড়লোক না তেমন, মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছি আমরা ও কেনাকাটা করে ফেলেছি শুধু দুজনের'ই জুতা কেনা বাকি রয়ে গেছিলো। আমাদের কাছে এত টাকা ও নেই যে ওদের ৩জনকে খুশি করতে পারবো। খারাপ লাগছিলো ভীষন! কেননা কোনোদিন কাউকে নতুন কাপড় দিয়ে খুশি করতে পারিনি। বাসায় আমার সব পুরনো জামা কাপড় আম্মু যে চায় তাকে দেয়। আমি নিজে কখনো কাউকে কিছু দেইনি। তন্বী বললো, দোস্ত আমাদের কিছু করার নেই রে চল। আমরা ওদের কাছ থেকে একরকম লজ্জা পেয়ে চলে আসছিলাম। কিছুদূর যেতেই চোঁখে পড়লো ব্যানগাড়ীতে বাচ্চাদের জামাকাপড় আর তোয়ালে বিক্রি হচ্ছে। তন্বী বলে এটায় কমদামী কাপড় পাওয়া যায়। কি করবি? ওকে নিয়া এগিয়ে গেলাম তারপর ভালো একটা জামা দেখিয়ে বললাম, চাচা এটার দাম কত? _একটার দাম ৩০০ দুইটা নিলে ৫০০টাকা মা। তন্বীরে বললাম এটা ও সম্ভব না রে আমার কাছে মাত্র ৫০০টাকা। ও বললো আমার কাছে ও ৫০০হবে। শুন এরচেয়ে কমদামি কোনটা জিগা তো। _এইটা ১৫০টাকা মা, তবে ২টা জামা'ই আছে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো, তারপর দুজনে চাচার কাছ থেকে ওই জামার মত ৩টা জামা ৭৫০টাকা দিয়ে নিয়ে নিলাম। পিছনে এগিয়ে গেলাম, দেখি ওরা কাগজ বস্তায় ভরতেছে। ডাক দিলাম, দৌড়ে আসলো ওরা। তারপর ৩জনের হাতে ৩প্যাকেট ধরিয়ে দিলাম। ওরা ৩জনই খুশিতে আমরা দুটোকে জরিয়ে ধরলো। সে কি আনন্দ ওদের ভাবা যায় না। তখনের মূহর্তটা কেমন ছিলো বলার মত না,প্রকাশ করার বাইরে। আমরা ও ওদের নিয়ে কিছু সেল্ফি তুলে চলে আসলাম। বাসায় শুনে সবাই বিশ্বাস করতে চায় নি, পরে ছবি দেখে বিশ্বাস করলো। সত্যি ই এই দিনটার কথা কোনোদিন ভূলার নয়। এরকম করা আর হয়ে উঠেনি। সত্যি ই এরকম সবাই করলে আলাদা দিন ই হতো। অথচ আমাদের মানুষিকতা কখনোই পাল্টাবে না। "বড়লোকরা বড়লোক ই থাকবে, আর গরীব রা গরীব ই থাকবে " এটাই আমাদের ভাবনা। বি:দ্রঃ সত্য ঘটনা! ৩বছর আগের কথা।
Comments
Post a Comment